বরিশালের বাকেরগঞ্জে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য দলবল নিয়ে আসা ব্র্যাকের মাঠকর্মীর চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন সুমন ফকির (৩০) নামের এক যুবক—এমন অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার ও স্থানীয়রা।
শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের মধ্য ভাতশালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাতে ঘরের খুঁটির সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, সুমন ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবার বলছে, এটি নিছক হতাশা নয়—বরং ব্র্যাকের মাঠকর্মী ও তার দলবল কর্তৃক ধারাবাহিক মানসিক চাপে পড়ে সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সুমন ফকির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তির টাকা সময়মতো দিতে না পারায় বারবার চাপের মুখে পড়ছিলেন তিনি। শনিবার বিকেলে ব্র্যাকের মাঠকর্মী খালেদা বেগম কয়েকজন লোকজন নিয়ে সুমনের বাড়িতে গিয়ে কড়া ভাষায় টাকা চেয়ে চাপ প্রয়োগ করেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয়রা জানান, খালেদা বেগম দলবল নিয়ে সুমনের বাড়িতে যাওয়ার সময় তিনি ঘরে ছিলেন। মাঠকর্মীদের দেখে দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নেন। এরপর ঘরের বাইরে থেকে উচ্চস্বরে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা একজন ঋণগ্রহীতার জন্য অপমানজনক ও মানসিকভাবে ভীষণ আঘাতমূলক ছিল বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের ভাষ্যমতে, বারবার ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে সন্ধ্যায় জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায়—সুমন গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে দরজা ভেঙে তাকে নিথর অবস্থায় পাওয়া যায় এবং পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
ব্র্যাকের মাঠকর্মী খালেদা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বাড়িতে গিয়ে তাকে পাইনি। দরজায় তালা ঝুলছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে আসি।” তবে নিহতের চাচা মোতালেব ফকির দাবি করেন, এটি মিথ্যা। তিনি বলেন, “সুমন ঘরে ছিলেন, দরজায় কোনো তালা ছিল না। খালেদা বেগম ও তার লোকজনের উপস্থিতি এবং চাপে পড়ে সুমন দরজা বন্ধ করে দেয় এবং পরে আত্মহত্যা করে। এটা সম্পূর্ণরূপে ব্র্যাকের চাপ ও নির্যাতনের ফল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সময় কিস্তি না দিতে পারায় তাকে টেলিফোনে, বাড়িতে এসে, এমনকি প্রতিবেশীদের সামনেও লজ্জা দেওয়া হতো। এটা কোনো অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, এটা নির্যাতন।’